বিড়াল পালন
ইসলামে বিড়াল পালন বৈধ এবং অনুমোদিত। এটি একটি পবিত্র প্রাণী হিসেবে বিবেচিত এবং ইসলামে প্রাণীদের প্রতি সদয় ও দয়ালু আচরণের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হাদিস ও ইসলামের অন্যান্য শিক্ষা অনুযায়ী, বিড়ালসহ সব প্রাণীর প্রতি সদাচরণ করা এবং তাদের প্রয়োজনীয় যত্ন নেওয়া ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।
বিড়ালের প্রতি সদাচরণের নির্দেশনা
ইসলাম মানবিকতা, দয়া এবং সহানুভূতির শিক্ষা দেয়। হাদিসে বলা হয়েছে যে, এক মহিলাকে শুধু বিড়ালের প্রতি নিষ্ঠুরতার জন্য আজাব ভোগ করতে হয়েছে। সেই মহিলা বিড়ালটিকে আটকে রেখেছিল এবং তাকে কোনো খাদ্য বা পানি সরবরাহ করেনি, ফলে বিড়ালটি ক্ষুধায় মারা যায়। নবী মুহাম্মদ (সা.) এ ঘটনাটি উল্লেখ করে বলেছেন, প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা করলে আল্লাহর শাস্তি অবধারিত। হাদিসে এসেছে:
ইসলামে বিড়ালের প্রতি দয়া ও সদয় আচরণের বিষয়ে কিছু উল্লেখযোগ্য হাদিস রয়েছে। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস তুলে ধরা হলো:
১. বিড়ালের প্রতি নিষ্ঠুরতার শাস্তি

একটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, বিড়ালের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের জন্য কঠোর শাস্তি হতে পারে।
হাদিস:
নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: “এক মহিলা জাহান্নামে গিয়েছে একটি বিড়ালের জন্য, যা সে আটকে রেখেছিল। সে বিড়ালটিকে খাবার-পানি দেয়নি, এবং তাকে মুক্তও করেনি, যাতে সে জমিনের পোকামাকড় খেতে পারে।”
(সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৫৭৪৫)
২. বিড়াল পবিত্র প্রাণী
ইসলামের দৃষ্টিতে বিড়ালকে পবিত্র প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। বিড়ালের ব্যবহৃত পানি বা তাদের শরীর থেকে কোনো অপবিত্রতা সৃষ্টি হয় না।
হাদিস:
ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“বিড়াল নাপাক নয়; এগুলো তোমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়ানো প্রাণী।”
(তিরমিজি, হাদিস: ৯২)
৩. বিড়ালের প্রতি নবী (সা.)-এর দয়া
নবী মুহাম্মদ (সা.) বিড়ালের প্রতি দয়াশীল ছিলেন এবং তাদের কোনো কষ্ট না দেওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। একটি ঘটনা বিশেষভাবে বিখ্যাত যেখানে নবী (সা.) বিড়ালের ঘুমের কারণে নিজের পোশাক কেটে ফেলেছিলেন।
হাদিস:
একবার নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জামার এক অংশে একটি বিড়াল ঘুমিয়ে ছিল। যখন তিনি নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় জামা নেন, তখন বিড়ালটি না জাগিয়ে তিনি জামার সেই অংশ কেটে ফেলেছিলেন যাতে বিড়ালটি ঘুমিয়ে থাকতে পারে।
(আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত)
৪. সাহাবিদের উদাহরণ
বিড়াল পালনে সাহাবিদেরও উদাহরণ পাওয়া যায়। বিশেষত, আবু হুরাইরা (রা.)-এর নামের অর্থই হচ্ছে “বিড়ালের পিতা”। তিনি বিড়ালকে এত ভালোবাসতেন যে, তিনি সব সময় তার সঙ্গে বিড়াল রাখতেন।
হাদিস:
আবু হুরাইরা (রা.)-কে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার নাম দেন, কারণ তিনি সব সময় তার সঙ্গে একটি ছোট বিড়াল রাখতেন।
(আল-বুখারি)
ইসলামের বিভিন্ন হাদিসে বিড়ালের প্রতি দয়া ও সদয় আচরণ করার গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব হাদিসে প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ইসলামের নৈতিক ও মানবিক দিকগুলো ফুটে ওঠে। বিড়াল পোষা ইসলামে বৈধ এবং এদের প্রতি যত্নশীল হওয়া একজন মুসলিমের দায়িত্ব।
বিড়াল পবিত্র প্রাণী
ইসলামিক ফিকহ বা বিধানের আলোকে বিড়ালকে পবিত্র প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিড়ালের শরীর বা তার মুখের লালা অশুচি নয়। এমনকি বিড়ালের ব্যবহার করা জিনিসপত্র যেমন পানির পাত্রও অপবিত্র নয়। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগে বিড়াল ঘরের ভেতরে থাকত এবং তিনি নিজেও বিড়ালের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন।
বিড়ালের প্রতি যত্ন ও অধিকার
ইসলামে প্রতিটি প্রাণীর কিছু অধিকার রয়েছে, এবং এটি প্রতিটি মানুষের কর্তব্য যে তারা সেই অধিকারসমূহ রক্ষা করবে। বিড়ালের প্রতি যত্ন নেওয়া, তাদের জন্য খাবার ও পানি সরবরাহ করা এবং কোনো ধরনের কষ্ট না দেওয়া একজন মুসলিমের নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব।
ইসলামে বিড়াল পালনের কিছু মূলনীতি:

- খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ: বিড়ালকে সময়মতো পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে হবে। তাদের ক্ষুধা বা পিপাসায় কষ্ট দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
- দয়া প্রদর্শন: বিড়ালের প্রতি সবসময় দয়া ও সহানুভূতি দেখাতে হবে। তাদের কোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক কষ্ট দেওয়া যাবে না।
- পরিচ্ছন্নতা: বিড়াল যেখানে বসবাস করে বা চলাফেরা করে, সেই স্থানটি পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। বিড়াল কোনো স্থানে নোংরা করলে, তা পরিষ্কার করতে হবে।
- স্বাধীনতা প্রদান: বিড়ালকে আটকে রাখা যাবে না। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে, এবং তাদের নিজের মতো করে ঘোরাফেরা করার স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।
উপসংহার
ইসলাম প্রাণীর প্রতি দয়া ও সহানুভূতির শিক্ষা দেয়, এবং বিড়ালের প্রতি সদাচরণ ও যত্ন নেওয়া সেই শিক্ষারই একটি অংশ। একজন মুসলিমের জন্য বিড়াল পালন কোনো পাপ নয়, বরং এটি একটি নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব যে, তারা বিড়ালকে যথাযথ যত্ন ও ভালোবাসা দেবে। তবে এটি মনে রাখতে হবে যে, প্রাণীর প্রতি কোনো ধরনের অবিচার ইসলামের দৃষ্টিতে গুনাহ হিসেবে গণ্য হয়, এবং এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
তাই ইসলামের দৃষ্টিতে বিড়াল পালন শুধু বৈধ নয়, এটি মানবতার প্রতি এবং প্রাণীদের প্রতি দয়া প্রদর্শনের একটি সুন্দর উদাহরণ।